কিডনির সমস্যা বা ডায়ালিসিস চলছে?

কিডনির সমস্যা বা ডায়ালিসিস চলছে?
আসুন আজ এক গভীর সত্য অনুসন্ধান করা যাক। কারণ সত্য আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করবে। সচেতনতা আপনাকে বাঁচাতে পারে রোগব্যাধির বিপদ থেকে। তাহলে ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়া যাক।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা কিডনির সমস্যাকে এমন এক ভয়ঙ্কর রূপে তুলে ধরে, যেন একবার সূত্রপাত হলে তা অনিবার্যভাবে ডায়ালিসিস বা কিডনি-প্রতিস্থাপন, এবং তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়া।
কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়। কারণ, খুবই সাধারণ উপসর্গ যেমন প্রস্রাব কয হওয়া বা পা ফুলে ওঠা, যা কিনা সঠিক চিকিৎসার দ্বারা খুব সহজে সেরে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই সাধারণ উপসর্গ নিয়ে মানুষ যখন চিকিৎসা কর্মীর কাছে পৌঁছে যায়, তখন বলা হয় যে এটি কিডনি-রোগ, খুব খারাপ সমস্যা। তার নানা রকমের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করা হয়, উঠে আসে সোডিয়াম পটাশিয়াম বা ক্রিটিনাইনের আতঙ্ক।
অতঃপর শুরু করে দেওয়া হয় চিকিৎসা পর্ব, কিন্তু রোগী আরোগ্য লাভ করতে পারে না, বরং তার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তার কিডনি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
তারপর শুরু হয় ডায়ালিসিসের পর্ব অর্থাৎ রোগীকে একটি নির্মম যন্ত্রের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। বলা হয় যে, ডায়ালিসিস চলতে থাকলে কিডনি পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে এর পরিণতি হয় বিপরীত, কিডনি প্রায় নষ্ট হয়ে যায় বা অকেজো হয়ে পড়ে।
অতঃপর উঠে আসে অন্য এক প্রস্তাব "কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট"। রোগী গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যে ঢলে পড়ে বা মৃত্যুর দিকে। এইভাবে প্রতিবছর প্রায় ২৭ লক্ষ মানুষ মারা যায়। তাহলে এর জন্যে দায়ী কি ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি নাকি চিকিৎসায় অবহেলা?

কিন্তু দেহতত্ত্বের গভীর সত্য হলো যে- আমাদের দেহ কখনোই নিজের বিরুদ্ধে আঘাত হানে না, নিজেকে এভাবে নষ্ট করে দেয় না, বরং পুনরুদ্ধারের প্রয়াস করে। আসলে কিডনির কোনো উপসর্গ মানে প্রতিরক্ষামূলক সঙ্কেত। এমতাবস্থায় প্রকৃত চিকিৎসা বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত অনুসারে আরোগ্য লাভ করা যায়।

মানবদেহে সর্বদা কিছু অপ্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি হয়, যেমন ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, সোডিয়াম, অপাচ্য প্রোটিন বা পটাশিয়াম ইত্যাদি। তখন এই উপাদানগুলিকে কিডনি মূত্রের সহিত বহিষ্কার করে দেয়। এমতাবস্থায় মূত্র বা রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ক্রিয়েটিনিন সোডিয়াম পটাশিয়াম অধিক হোক বা অল্প, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে- কিডনি খারাপ হয়ে গেছে। আসলে রক্তে ও মূত্রে উপস্থিত প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় উপাদান গুলোর মাত্রা নির্ভর করে দেহের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উপর, যার সাথে যুক্ত আমাদের খাদ্যাভাস ও দৈনিক জীবনধারা। আমাদের শরীর যখন যতটুকু ক্রিটিন সোডিয়াম পটাশিয়াম ব্যবহার করে তার ভিত্তিতে কিডনিও সুচারুভাবে কার্যসম্পাদন করে।
আসলে কিডনি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ও pH ভারসাম্য রক্ষা করে, রক্ত শোধন করে, অতঃপর রক্তধারাকে মসৃণ-প্রবাহ প্রদান করে। অর্থাৎ কিডনি মানে একখণ্ড মাংস নয়, বরং মানবদেহের জৈবিক অস্তিত্বের অনন্য সঞ্চালক। কিন্তু এই সত্যটা অনুধাবন না করে যদি যান্ত্রিক ডায়াগনস্টিকের আধারে বা তার প্যারামিটারের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে কিডনির রোগী বলে গণ্য করা হয়, তবে তা কি ভুল সিদ্ধান্ত নয়? যেমন-
সোডিয়াম ও পটাশিয়াম হলো শরীরের অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক শক্তির মূল সঞ্চালক, অর্থাৎ হৃদস্পন্দনের প্রধান প্রেরণাদায়ক। কিন্তু প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট অনুসারে যদি ভাবা হয় যে- পটাশিয়াম বেড়ে গেছে অর্থাৎ বিপজ্জনক, তাহলে এটি কি সঠিক সিদ্ধান্ত?

কিডনির সমস্যার বিশেষ কিছু উপসর্গ আছে। যদি উপসর্গগুলি দেখা যায় তাহলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সাধারণ উপসর্গগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. প্রস্রাবের পরিবর্তন-
* প্রস্রাবের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে পূর্বের স্বাভাবিক অভ্যাসের তুলনা। বিশেষ করে রাতেও বারবার প্রস্রাব করতে হয়।
* প্রস্রাবের রং লালচে বা বাদামী হয়ে যায়। প্রস্রাব করলে অতিরিক্ত ফেনা বা বুদবুদ সৃষ্টি হয়।
* প্রস্রাবে রক্ত যুক্ত হতে পারে।
২. শরীরে ফোলা:
শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য পদার্থ পুরোপুরি বের হয়ে যেতে না পারলে তার শরীরে জমে থাকে। তার ফলে মুখ, চোখের চারপাশে, হাত, পা, গোড়ালি ফুলে ওঠে।
৩. রোগী ক্লান্ত ও দুর্বল হতে থাকে।
৪. কোমরের আশেপাশে বা পিঠের নিচের দিকে বেদনা হয়।
৫. ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৬. ত্বকে চুলকানি হতে পারে ও ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
৭. শরীরে অতিরিক্ত তরল সঞ্চিত হলে ফুসফুসের উপর চাপ পড়ে, যার ফলে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা যায়।

উপরে উল্লেখিত উপসর্গসমূহ দেখা গেলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বা কবিরাজের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
                      ~ রাম রানা

মন্তব্যসমূহ