মানুষের কিডনিতে ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি হয় কিভাবে?


পিত্তথলির পাথর ও কিডনির পাথর সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

পিত্তথলিতে পাথর তৈরি হয় কিভাবে?

লিভারের নিচে অবস্থিত একটি ছোট্ট থলির মতো অঙ্গ, যার নাম পিত্তথলি। এখানেই জমা হয় লিভার থেকে নিঃসৃত পিত্তরস। তৈলাক্ত খাদ্যবস্তু বা চর্বিযুক্ত খাবার হজম করতে এই পিত্তরস বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনশৈলের কারণে যখন এই পিত্তরসের উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, তখন পিত্তথলিতে পাথর তৈরি হয়। এই পাথরগুলো ছোট বালুকণার আকারে হতে পারে, আবার ১০-১৫ মিলিমিটার আকারের বড় পাথরে পরিণত হতে পারে।

পিত্তপাথর তৈরি হওয়ার মূল কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

* অতিরিক্ত কোলেস্টেরল: পিত্তথলিতে যে পিত্তরস সঞ্চিত হয় তাতে বিশেষ কিছু উপাদান পাওয়া যায়, যেমন কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন এবং পিত্ত লবণ (bile salts)। সাধারণত পিত্তরসে যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিত্ত লবণ থাকে তার দ্বারা কোলেস্টেরল দ্রবীভূত হয়। কিন্তু কখনো কখনো এর ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে পড়ে, হয়তো পিত্ত লবণের মাত্রা কমে যায় বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এমতাবস্থায় কিছু পরিমাণ কোলেস্টেরল অদ্রবীভূত অবস্থায় পিত্তথলির মধ্যে পড়ে থাকে। যা কিনা কালক্রমে জমাটবদ্ধ হয়ে ছোট ছোট দানার আকার নিতে পারে বা কঠিন পাথরে পরিণত হয়।

* অতিরিক্ত বিলিরুবিন: আমাদের শরীরে লাল রক্তকণিকা ভাঙ্গনের ফলে একটি বিশেষ উপাদান সৃষ্টি হয়, যার নাম হল বিলিরুবিন। লাল রক্ত কণিকার গড় আয়ু প্রায় ১২০ দিন। এই সময়ের পরে সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত বা অথর্ব লাল রক্তকণিকা গুলো ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও লিভার সিরোসিস বা অ্যানিমিয়া ইত্যাদি রোগের কারণে দ্রুত হারে লাল রক্ত কণিকা ভেঙে যেতে পারে, তখন অতিরিক্ত বিলিরুবিন তৈরি হয়। সাধারণত লিভার এই বিনিরবিন প্রক্রিয়াকরণ ও বহিষ্করণ করে। তাই বিলিরুবিন লিভারে এসে পৌঁছায়, তারপর পিত্তরসের মাধ্যম পিত্তথলিতে উপস্থিত হয়। এখানে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জমাটবদ্ধ হয়ে পিগমেন্ট পাথরে (pigment stones) পরিণত হয়।

*  আবার অনেক ক্ষেত্রে পিত্তথলি নিয়মিত ভাবে খালি হয় না, অর্থাৎ কিছু পিত্তরস সেখানে ঘন হয়ে যায়। এই ঘন পিত্তরস জমে গিয়ে পাথর তৈরি করতে পারে।
সাধারণত এই পাথর ব্যথা সৃষ্টি করেনা, কিন্তু যখন পাথর পিত্তনালীর পথে আটকে যায় তখন তীব্র ব্যথা হয়, প্রদাহ হয়।

কিডনিতে পাথর তৈরি হয় কিভাবে?

মানুষের কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার মূল কারণ হলো রক্তে নির্দিষ্ট কিছু পদার্থের মাত্রাতিরিক্ত জমা হওয়া। সেই উপাদানগুলো স্ফটিকে পরিণত হতে পারে অর্থাৎ খুব ধীর প্রক্রিয়ার দ্বারা জামাটবদ্ধ হয়ে কঠিন পাথরে রূপান্তরিত হয়। কিডনির প্রধান কাজ হল শরীরের তরল, খনিজ ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং কিডনি শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সময় যদি কিডনির মধ্যে বর্জ্য পদার্থগুলো (যেমন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড, ফসফেট ইত্যাদি) অতিরিক্ত সঞ্চিত হয় এবং যা কিনা ক্রমান্বয়ে জমাটবদ্ধ হয়ে শুরুর দিকে ছোট ছোট বালুকণার আকার ধারণ করে, কিন্তু পরবর্তীকালে তা বাড়তে বাড়তে ১০-১৫ মিলিমিটার পাথরে পরিণত হতে পারে। এর সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে।

কিডনিতে পাথর তৈরির কারণ:

* উচ্চ ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম বা লবণ পদার্থ। কিছু খাবারে এই উপাদান গুলো বেশি পরিমাণে থাকে, যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত পদার্থ, জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি। আবার কিছু প্রাকৃতিক শাক সবজির মধ্যেও এই উপাদানগুলি থাকে কিন্তু তা আদৌ ক্ষতিকারক নয়।
* অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিনযুক্ত খাবার বিশেষ করে মাছ মাংস ডিম দুধ, যা কিনা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
* এছাড়া ধূমপান মদ্যপান বা যে কোন মাদকদ্রব্য কিডনিতে পাথর তৈরির প্রবণতাকে উসকে দেয়।
* গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি বা কিডনির সার্জারি করা হলে পরবর্তীকালে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
* এলোপ্যাথিক ওষুধ (অ্যাসপিরিন, অ্যান্টাসিড, ডাইইউরেটিক্স, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি) কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে। এটি পাথর সৃষ্টির বড় কারণ হতে পারে, যেহেতু মানুষ আজকাল এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন।
* পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করলে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে।

মানুষ ভাবেন যে, কিডনিতে পাথর মানেই সার্জারি করাতে হবে। কিন্তু বাস্তব হলো যে, সার্জারি প্রকৃত সমাধান নয়। বরং সার্জারির মাধ্যমে অক্ষত কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাতে পরবর্তীকালে পুনরায় পাথর তৈরির ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
কিডনির পাথর দূর করার সহজ উপায় আছে। সঠিক পথ্য ও প্রাকৃতিক ভেষজ ওষুধের দ্বারাই প্রকৃত নিরাময় সম্ভব। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই পারেন। আজও প্রচলিত আছে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন হোমিওপ্যাথ আয়ুর্বেদ ন্যাচারোপ্যাথ ইত্যাদি।

Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
           ~ রাম রানা 

মন্তব্যসমূহ