ডায়াবেটিস রোগের উপসর্গ কি কি?

বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস এক আতঙ্ক, এক মহামারি। কিন্তু কেন? এই রোগের কি সঠিক চিকিৎসা নেই? কেনইবা আজীবন ধরে মেডিসিন তথা কেমিক্যাল সেবন করতে হয়? কেনইবা কৃত্রিম ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়? ইনসুলিন ব্যবহারকারী শিশুরা গভীরভাবে পীড়িত হয়। রোগী সেরে উঠতে পারে না, বরং তার জটিলতা বেড়ে যায়, মেডিসিনের পরিমাণ ও ইনসুলিনের মাত্রা লাগাতার বাড়ানো হয়। চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারে নেমে আসে আর্থিক দুর্দশা। তাই হয়তো আজ রোগে নয়, বরং রোগের চিকিৎসা জনিত কারণে পীড়িত মানুষের অন্তরে করুণ জিজ্ঞাসা- কোথাও কি নেই একফোঁটা আরোগ্য? কোথাও কি নেই এক প্রকৃত বৈদ্য? কোথাও কি নেই একটু সঞ্জীবনী ঔষধ?
এই জিজ্ঞাসার জবাব আজও দেয়নি চিকিৎসা ব্যবসায়ীরা। অথচ চিকিৎসা-বিজ্ঞান আবিষ্কার করে গেছে আরোগ্যের মূলমন্ত্র- প্রতিটি রোগের কারণ আছে, কারণটি নিবারণ করলেই নিশ্চিত নিরাময় লাভ করা যায়। একেই বলে Holistic healing/medicine. চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অমোঘ সিদ্ধান্ত অনুসারে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা যেকোনো রোগের নিশ্চিত আরোগ্য আছে।

ডায়াবেটিস রোগ আসলে কি?
Diabetes এর আসল নাম হল হল মধুমেহ বা বহুমূত্র। মানুষের পেটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি হল প্যানক্রিয়াস, লিভার ও কিডনি। এদের যৌথ প্রয়াসে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে শরীরের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সাপেক্ষে। কিন্তু যখন এই তন্ত্র স্বাভাবিক ছন্দে ক্রিয়া সম্পাদন করতে পারে না, শরীরের প্রতি সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমাদের অস্বাভাবিক অত্যাচারের ফলে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতির নাম হল ডায়াবেটিস। অতঃপর শরীরে কিছু সমস্যা হয় বা অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা যায়, যা নিচে উল্লেখ করা হলো-

ডায়াবেটিসের উপসর্গ:
(১) বারবার প্রস্রাব (Polyuria): শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে তা প্রস্রাবের সহিত বাইরে বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকে, ফলত রোগীকে অনেক বার প্রস্রাব করতে হয়। যা কিনা তার পূর্বেকার অভ্যাসের তুলনায় অস্বাভাবিক বা বহু বার মূত্র ত্যাগ করতে হয়। তাই এ রোগের নাম বহুমূত্র। প্রাচীন আয়ুর্বেদ বিজ্ঞানীরা যথার্থই বিশেষণ দিয়েছেন "বহুমূত্র"।
(২) অত্যধিক তৃষ্ণা (Polydipsia): অধিক প্রস্রাব হওয়ার কারণে শরীরের জলের চাহিদা বাড়ে, তাই রোগী বারবার জল পান করে। যা কিনা তার পূর্বের অভ্যাসের তুলনায় অস্বাভাবিক ও অধিক তৃষ্ণা।

(৩) অতিরিক্ত ক্ষুধা (Polyphagia): কোষের প্রধান রসদ গ্লুকোজ। ইনসুলিনের দ্বারা গ্লুকোজ প্রেরিত হয় কোষের অভ্যন্তরে। কিন্তু পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পেলে কোষগুলিও ক্ষুধার্ত থেকে যায় অর্থাৎ কোষগুলি পর্যাপ্ত এনার্জি উৎপন্ন করতে পারে না। এর ফলে রোগীর ক্ষুধার অনুভূতি বেড়ে যায় এবং বারবার খেতে চায়, যা কিনা তার পূর্বের অভ্যাসের তুলনায় অস্বাভাবিক ও অধিক ক্ষুধা।

(৪) মাংসপেশীর অবক্ষয় (Cachexia), শরীরের ওজন হ্রাস: দেহের ফ্যাট এবং মাংসপেশীর প্রোটিন রূপান্তরিত হয় সরল গ্লুকোজ অণুতে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় Biochemical pathway- Catabolism. অতঃপর এই সরল গ্লুকোজ ব্যবহার করে কোষগুলি এনার্জি উৎপন্ন করে। এক্ষেত্রে ফ্যাটের ভাঙ্গন ও পেশীর প্রোটিনের ভাঙ্গনের ফলে মাংসপেশীর আকার আয়তন হ্রাস পায় ক্রমশ।

৫) একটি বিশেষ লক্ষণ- রোগীর মূত্রে ও ঘামে শর্করার আধিক্য থাকে বলে মধুর (Honey) মতো গন্ধযুক্ত হয় এবং মূত্রের স্বাদ মিষ্টতা যুক্ত হয়। (তাই রোগটির নাম "মধুমেহ")। নিজের ২-৩ ফোঁটা মূত্র জিভের উপর রাখলে বোঝা যায় তার স্বাদ নোনতা নাকি মিষ্টি।

উপরে উল্লেখিত উপসর্গসমূহ যদি পরিলক্ষিত হয় তাহলে এটি ডায়াবেটিস রোগ। যদি শরীরে এই উপসর্গগুলি না থাকে তাহলে কোন ব্যাক্তি ডায়াবেটিসের রোগী নয়। কিন্তু মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রি মানুষের ব্লাডসুগার টেস্ট করে তাকে ডায়াবেটিসের রোগী বলে প্রতিপন্ন করে। যদি কোনো উপসর্গ না থাকে তাহলে কেবলমাত্র ব্লাডসুপার টেস্টের ভিত্তিতে মানুষকে ডায়াবেটিস রোগী বলে গণ্য করার সিদ্ধান্ত কি বিজ্ঞানসম্মত?

যাই হোক, ডায়াবেটিসের উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। আজও প্রচলিত আছে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন আয়ুর্বেদ হোমিওপ্যাথ ন্যাচারোপ্যাথ যোগ-চিকিৎসা ইত্যাদি।

Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
                      ~ রাম রানা

মন্তব্যসমূহ