ঠান্ডা লাগা, সর্দি হাঁচি। উপকারী তুলসীপাতা ও আদা:
ঠান্ডা লাগা, সর্দি হাঁচি- কারণ ও নিবারণ:
সর্দি হাঁচি সৃষ্টি হয় কিভাবে?
নাকের অভ্যন্তরে, গলায় ও ফুসফুসে যদি ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ধূলিকণা পরাগরেণু ইত্যাদি প্রবেশ করে, যা কিনা আমাদের পক্ষে অস্বস্তিকর বা ক্ষতিকারক। তাই এই অবাঞ্ছিত উপাদান গুলোকে বহিষ্কারের এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে শরীর। এর প্রধান উপসর্গ হলো সর্দি ও হাঁচি।
আসল ঘটনাটি হল যে, তখন ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে, এবং নাকের অভ্যন্তরে বা শ্বাসযন্ত্রে উৎপন্ন হয় সর্দি বা শ্লৈষ্মা জাতীয় আঠালো তরল, যার সঙ্গে আটকে পড়ে প্রবিষ্ট জীবাণু ও টক্সিন পদার্থ, তারপর সর্দি হাঁচির সহিত বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ রোগজীবাণু বা টক্সিনের হাত থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকে।
কখন সর্দি হাঁচির উপসর্গ দেখা যায়?
* সংক্রমণ- Infection: সাধারণ সর্দি- Common cold বা ফ্লু Flu. এটি সাধারণত একপ্রকার ভাইরাল ইনফেকশন। যার মধ্যে রাইনোভাইরাস (Rhinovirus) সবচেয়ে প্রচলিত। তখন ভাইরাসগুলিকে বহিষ্কার করতে সর্দি হাঁচির মতো উপসর্গ দেখা যায়।
* অ্যালার্জি- Allergy: অনেক মানুষের ক্ষেত্রে সর্দি ও হাঁচির প্রধান কারণ হলো অ্যালার্জি। বিভিন্ন অ্যালার্জেন (যেমন - ফুলের পরাগ, ধুলো, ধোঁয়া, প্রসাধন সামগ্রী ইত্যাদি) এই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
* তাপমাত্রা বা আবহাওয়া পরিবর্তন: সারাবছরে একাধিকবার তাপমাত্রা বা আবহাওয়া বদলে যায় ঋতু পরিবর্তনের ফলে। তখন সংবেদনশীল শ্বাসযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে অনেক মানুষের শ্লেষ্মা সর্দি উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা কিনা শ্বাসযন্ত্রের প্রতিরক্ষা মূলক আস্তরণ (ঠান্ডা বাতাস বা শীতল বাতাসের প্রভাব থেকে শ্বসনতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখার কৌশল)।
তাহলে পরিষ্কার বোঝা গেল যে- ঠান্ডা লাগা, সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর- উপসর্গগুলি কোন রোগ নয়, বরং শরীরকে সুরক্ষিত রাখার বিশেষ কৌশল। অতএব কৃত্রিমভাবে এই উপসর্গগুলিকে থামিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং আমাদের উচিত হলো যে- বিশেষ পথ্য ও বিশ্রাম সহযোগে শরীরকে সাপোর্ট করা, যাতে এই উপসর্গগুলি তাদের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে। অতঃপর সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
এমতাবস্থায় আমাদের কি করনীয়? আসুন জেনে নেওয়া যাক সঠিক উপায়।
যখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে- সর্দি হাঁচি কাশি বা জ্বর জাতীয় উপসর্গ এসে গেছে, তখন থেকেই আপনাকে সঠিক পথ্যনীতি অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
* রান্না করা আহার গ্রহণ করা যাবে না, যেকোনো অগ্নিপক্ক খাদ্যবস্তু বর্জনীয়। খেতে হবে ফলমূল ও কাঁচা সবজি। কাঁচা সবজি মানে শসা বিট গাজর টমেটো মুলো ইত্যাদি।
কতটা পরিমাণে খেতে হবে?
খিদে অনুসারে খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
* দিনের বেলায় শরীরে রোদ লাগাতে পারলে খুব ভালো। হালকা গরম জলে পান করা যেতে পারে।
এই নিয়মটা মেনে চললে ১-২ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে ৩-৪ দিন সময় লাগতে পারে।
তৎসহ দু' একটি প্রাকৃতিক ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ভেষজ শত শত বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ভেষজগুলো সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, প্রদাহ কমাতে খুবই কার্যকরী, এবং অপরপক্ষে শ্লেষ্মার নির্গমন বাড়িয়ে উপসর্গ নিবৃত্ত করতে সাহায্য করে। নিচে কিছু কার্যকর ভেষজের উল্লেখ করা হলো:
তুলসি পাতা- অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনোমডিউলেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, যেমন কাশি, সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদিতে অত্যন্ত কার্যকরী। সকালে খালি পেটে ১০টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আদা- এক টুকরো আদা (২-৩ গ্রাম) প্রায় ২৫০ ml জলে ফুটিয়ে সেই জল হালকা উষ্ণ অবস্থায় ধীরে ধীরে পান করা যেতে পারে সারাদিনে ২-৩ বার।
রসুন- রসুন শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ সম্পন্ন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সর্দি বা ফ্লু'র তীব্রতা কমাতে পারে। সকালে বা বিকালে ২টি কাঁচা রসুন চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। যদি উষ্ণ আদাজল পান করা হয় তাহলে রসুন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
যাদের বরাবর এলার্জি জনিত সর্দি হাঁচি বা কাশি হয় তাদের ক্ষেত্রে পথ্য তালিকা একটু ভিন্নধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদী। কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব, এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে পরবর্তী প্রতিবেদনে।
স্মরণে রাখবেন যে, এই ঘরোয়া উপায় বা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োগ করতেই পারেন, কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞের বা কবিরাজের পরামর্শ নিতেই হবে।
Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।।
~ রাম রানা
সর্দি হাঁচি সৃষ্টি হয় কিভাবে?
নাকের অভ্যন্তরে, গলায় ও ফুসফুসে যদি ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ধূলিকণা পরাগরেণু ইত্যাদি প্রবেশ করে, যা কিনা আমাদের পক্ষে অস্বস্তিকর বা ক্ষতিকারক। তাই এই অবাঞ্ছিত উপাদান গুলোকে বহিষ্কারের এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে শরীর। এর প্রধান উপসর্গ হলো সর্দি ও হাঁচি।
আসল ঘটনাটি হল যে, তখন ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে, এবং নাকের অভ্যন্তরে বা শ্বাসযন্ত্রে উৎপন্ন হয় সর্দি বা শ্লৈষ্মা জাতীয় আঠালো তরল, যার সঙ্গে আটকে পড়ে প্রবিষ্ট জীবাণু ও টক্সিন পদার্থ, তারপর সর্দি হাঁচির সহিত বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়, অর্থাৎ রোগজীবাণু বা টক্সিনের হাত থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকে।
কখন সর্দি হাঁচির উপসর্গ দেখা যায়?
* সংক্রমণ- Infection: সাধারণ সর্দি- Common cold বা ফ্লু Flu. এটি সাধারণত একপ্রকার ভাইরাল ইনফেকশন। যার মধ্যে রাইনোভাইরাস (Rhinovirus) সবচেয়ে প্রচলিত। তখন ভাইরাসগুলিকে বহিষ্কার করতে সর্দি হাঁচির মতো উপসর্গ দেখা যায়।
* অ্যালার্জি- Allergy: অনেক মানুষের ক্ষেত্রে সর্দি ও হাঁচির প্রধান কারণ হলো অ্যালার্জি। বিভিন্ন অ্যালার্জেন (যেমন - ফুলের পরাগ, ধুলো, ধোঁয়া, প্রসাধন সামগ্রী ইত্যাদি) এই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
* তাপমাত্রা বা আবহাওয়া পরিবর্তন: সারাবছরে একাধিকবার তাপমাত্রা বা আবহাওয়া বদলে যায় ঋতু পরিবর্তনের ফলে। তখন সংবেদনশীল শ্বাসযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে অনেক মানুষের শ্লেষ্মা সর্দি উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা কিনা শ্বাসযন্ত্রের প্রতিরক্ষা মূলক আস্তরণ (ঠান্ডা বাতাস বা শীতল বাতাসের প্রভাব থেকে শ্বসনতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখার কৌশল)।
তাহলে পরিষ্কার বোঝা গেল যে- ঠান্ডা লাগা, সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর- উপসর্গগুলি কোন রোগ নয়, বরং শরীরকে সুরক্ষিত রাখার বিশেষ কৌশল। অতএব কৃত্রিমভাবে এই উপসর্গগুলিকে থামিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং আমাদের উচিত হলো যে- বিশেষ পথ্য ও বিশ্রাম সহযোগে শরীরকে সাপোর্ট করা, যাতে এই উপসর্গগুলি তাদের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে। অতঃপর সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
এমতাবস্থায় আমাদের কি করনীয়? আসুন জেনে নেওয়া যাক সঠিক উপায়।
যখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে- সর্দি হাঁচি কাশি বা জ্বর জাতীয় উপসর্গ এসে গেছে, তখন থেকেই আপনাকে সঠিক পথ্যনীতি অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
* রান্না করা আহার গ্রহণ করা যাবে না, যেকোনো অগ্নিপক্ক খাদ্যবস্তু বর্জনীয়। খেতে হবে ফলমূল ও কাঁচা সবজি। কাঁচা সবজি মানে শসা বিট গাজর টমেটো মুলো ইত্যাদি।
কতটা পরিমাণে খেতে হবে?
খিদে অনুসারে খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
* দিনের বেলায় শরীরে রোদ লাগাতে পারলে খুব ভালো। হালকা গরম জলে পান করা যেতে পারে।
এই নিয়মটা মেনে চললে ১-২ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে ৩-৪ দিন সময় লাগতে পারে।
তৎসহ দু' একটি প্রাকৃতিক ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ভেষজ শত শত বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ভেষজগুলো সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, প্রদাহ কমাতে খুবই কার্যকরী, এবং অপরপক্ষে শ্লেষ্মার নির্গমন বাড়িয়ে উপসর্গ নিবৃত্ত করতে সাহায্য করে। নিচে কিছু কার্যকর ভেষজের উল্লেখ করা হলো:
তুলসি পাতা- অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং ইমিউনোমডিউলেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, যেমন কাশি, সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদিতে অত্যন্ত কার্যকরী। সকালে খালি পেটে ১০টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আদা- এক টুকরো আদা (২-৩ গ্রাম) প্রায় ২৫০ ml জলে ফুটিয়ে সেই জল হালকা উষ্ণ অবস্থায় ধীরে ধীরে পান করা যেতে পারে সারাদিনে ২-৩ বার।
রসুন- রসুন শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ সম্পন্ন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সর্দি বা ফ্লু'র তীব্রতা কমাতে পারে। সকালে বা বিকালে ২টি কাঁচা রসুন চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। যদি উষ্ণ আদাজল পান করা হয় তাহলে রসুন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
যাদের বরাবর এলার্জি জনিত সর্দি হাঁচি বা কাশি হয় তাদের ক্ষেত্রে পথ্য তালিকা একটু ভিন্নধর্মী ও দীর্ঘমেয়াদী। কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব, এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে পরবর্তী প্রতিবেদনে।
স্মরণে রাখবেন যে, এই ঘরোয়া উপায় বা প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োগ করতেই পারেন, কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞের বা কবিরাজের পরামর্শ নিতেই হবে।
Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।।
~ রাম রানা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন