সাধারণ কাশি প্রসঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা:

কাশি কোনো রোগ নয়, এতে মানুষের প্রাণহানির প্রশ্নই নেই। এটি খুবই সাধারণ একটি উপসর্গ, যা কিনা যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে বছরে একবার দুবার হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের কাশি অধিক লক্ষ্য করা যায়। আসুন তাহলে আজ কাশি প্রসঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক:

কাশি কেন হয়?
আমাদের শ্বসনতন্ত্রে যদি জীবাণু ধুলো ধোঁয়া বা অন্যান্য ক্ষতিকারক কণাগুলো প্রবেশ করে তখন সুচতুর শরীর এই অবাঞ্ছিত পদার্থ সমূহকে বাইরে বের করে দেওয়ার প্রয়াস করে। এই প্রয়াসের অন্য নাম হলো কাশি, এটি আসলে শরীরের প্রতিরক্ষামূলক রণকৌশল।

সুতরাং শারীরিক বিজ্ঞান বা দেহতত্ত্ব অনুসারে- কাশি কখনো কৃত্রিমভাবে থামিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এর মাধ্যমে শ্বসনন্তন্ত্র থেকে জীবাণু বা টক্সিন পদার্থ বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। অর্থাৎ কাশি হল শরীরকে সুরক্ষিত রাখার বিশেষ কার্যক্রম। কিন্তু কাশির এই কার্যপ্রক্রিয়া ঠিক কিভাবে সংঘটিত হয়? নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

কাশির প্রক্রিয়া প্রধানত তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়:
১. প্রথমে আমাদের শ্বসনন্তন্ত্র স্বতন্ত্রভাবে একটি গভীর শ্বাস গ্রহণ করে (inhalation), এবং গৃহীত বাতাস দ্বারা ফুসফুস পরিপূর্ণ হয়। এই গভীর স্বাস গ্রহণের ঘটনাটি প্রায়ই আমাদের অজ্ঞাতসারে হয়ে যায়, অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ঠিকঠাক ঠাহর করে উঠতে পারি না- এটি কখন কিভাবে হয়ে যায়।
২. অতঃপর ক্ষণিকের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্বরযন্ত্র (শ্বাসনালির উপরের অংশ)। এমতাবস্থায় শ্বাস গ্রহণের উপলক্ষে পূর্বের প্রসারিত পাঁজরগুলি শিথিল হয়, বুকের পেশী ও পেটের পেশী সংকুচিত হয় (compression), এর ফলে ফুসফুসের ভিতরে আবদ্ধ বাতাসের উপর চাপ তৈরি করে।
৩. তখন পূর্বের বন্ধ থাকা স্বরযন্ত্র হঠাৎ খুলে যায়, এবং ফুসফুসের ভিতরের উচ্চ চাপযুক্ত বাতাস তীব্র গতিতে বেরিয়ে আসে (expulsion)। এই গতিশীল বাতাসের সঙ্গে অবাঞ্ছিত পদার্থগুলো শ্বাসনালি থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় এবং সেই মুহূর্তে একটি তীব্র শব্দ সৃষ্টি হয়, যা আমরা কাশি হিসেবে প্রতিপন্ন করি।

তাই আমাদের উচিত, বিশ্রাম ও বিশেষ পথ্য সহযোগে শরীরকে সাপোর্ট করা, যাতে কাশির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে- এভাবেই প্রকৃত আরোগ্য লাভ করা যায়। এই সিদ্ধান্ত মেনে চলে আয়ুর্বেদ হোমিওপ্যাথি ও ন্যাচারোপ্যাথির মতো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহ।

অতএব কাশি কোনো রোগ নয়, এতে মানুষের প্রাণহানির কোন প্রশ্নই নেই। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার তথ্য থেকে জানা গেছে যে, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সর্দিকাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় ৬.৫ লক্ষ মানুষ মারা পড়ে প্রতিবছর। এক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি হয় বা ব্যবহৃত মেডিসিন গুলোর গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও পরিলক্ষিত হয়।

যেখানে সাধারন কাশি কোন রোগ নয়, কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় কাশিকে রোগ হিসাবে ট্রিট করা হয়, এবং কাশি থামিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় কেমিক্যালযুক্ত ড্রাগস, যেমন-
Cough Suppressants/Antitussives- dextromethorphan, benzonatate. Expectorants- guaifenesin. Decongestants- pseudoephedrine, phenylephrine. Antihistamines- chlorpheniramine, cetirizine, desloratadine.
Bronchodilators- salbutamol, terbutaline.

উপরে উল্লেখিত মেডিসিন গুলোর দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বা প্রাণঘাতী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যেমন-
* হৃদপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে, হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয় (Arrhythmia), হৃৎপিণ্ডে Electrical failure এর মতো মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
* তীব্র শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (Cardiac arrest) জনিত মৃত্যু হয়।
* প্রবল রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে Heart attack বা মস্তিষ্কে Cerebral stroke হতে পারে।
* রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায় (Hypokalemia), এর ফলে শ্বাসযন্ত্র পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা ব্যর্থ হয়ে পড়ে।
* অনেক ক্ষেত্রে লিভার বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
* ফুসফুস এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, অ্যাজমা অ্যাটাক বা COPD এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, গুরুতর শ্বাসকষ্ট হয়। যা কিনা প্রাণঘাতী হতে পারে।
* নিউমোনিয়া (Pneumonia) ও ব্রঙ্কিওলাইটিস (Bronchiolitis, Bronchitis) এর মতো ব্যাধি সৃষ্টি হয় এবং তা গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়।

অতএব কাশি নিরাময় করা এবং ওষুধের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, প্রয়োজন হলে সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। আজও প্রচলিত আছে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন আয়ুর্বেদ হোমিওপ্যাথ ন্যাচারোপ্যাথ ইত্যাদি।

Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
                  ~ রাম রানা

মন্তব্যসমূহ