কাশি নিরাময়ে তুলসী পাতার উপকারিতা:

সাধারণ কাশি হলো শরীরের একটি প্রতিরক্ষা মূলক প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Protective reflex). যখন ফুসফুসে বা শ্বাসনালীতে অনুপ্রবেশ করে ধুলো ধোঁয়া জীবাণু বা অন্যান্য অস্বস্তিকারক কণিকা, তখন কাশির মাধ্যমে এই অবাঞ্ছিত উপাদান গুলো শ্বাসযন্ত্র থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ এটি শরীরকে বিপদ মুক্ত করা ও সুরক্ষিত রাখার কৌশল।

অতএব আমাদের বোঝা উচিত যে, কাশি কোন রোগ নয়, বরং পক্ষান্তরে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের আত্মরক্ষা। তাই কাশি হলে অযথা ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই বা অবহেলা করাও উচিত নয়, বরং খুব সচেতনভাবে কাশির উপসর্গটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তথা নিরাময় করতে হবে।

কখন কাশির বহিঃপ্রকাশ হয়?

কাশির উপসর্গটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যা স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী উভয়ই হতে পারে। যেমন-
* ভাইরাসের সংক্রমণ (Viral infection): সর্দি, ফ্লু (influenza), ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি ভাইরাল সংক্রমণের কারণে কাশি ও জ্বর হতে পারে। এই সময় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অংশ হিসেবে আঠালো শ্লেষ্মা তৈরি হয়, যার সাথে আটকা পড়ে জীবাণুগুলি। অতঃপর কাশির মাধ্যমে বাইরে বহিষ্কৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে কফ বা শ্লৈষ্মাা ছাড়াও শুকনো কাশির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
* ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ (Bacterial infection): নিউমোনিয়া, হুপিং কফ, যক্ষা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমনের কারণেও কাশি হতে পারে, এক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে সাধারণত জ্বর ও শারীরিক ক্লান্তি থাকতে পারে।
* এলার্জির কারণে কাশি হতে পারে, যাকে Hay fever বলা হয়। এক্ষেত্রে এলার্জেন উপাদান গুলি হল পরাগ ধুলো ছত্রাক বা বিছানার গুঁড়া ইত্যাদি।
* হাঁপানির একটি প্রধান লক্ষণ হলো কাশি বা শুকনো কাশি, এছাড়া শ্বাসকষ্ট ও বুকে সাঁ সাঁ শব্দ।
* সাইনাসের সমস্যা থাকলেও শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি হতে পারে।
* অনেক ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য, কিছু ড্রাগ বা মেডিসিন ব্যবহার করলেও কাশির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কাশি নিরাময়ের উপায়:

সঠিক পথ্য- এক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো পথ্য। যখন থেকে কাশি শুরু হয় তখন থেকেই ব্যক্তিকে এক বিশেষ পথ্যনীতি মেনে চলতে হয়। যেমন সকল প্রকার রান্না করা আহার বা অগ্নিপক্ক খাদ্যবস্তু গ্রহণ করা যাবে না। কেবলমাত্র ফলমূল বা কাঁচা সবজি খেতে হবে। কাঁচা সবজি বলতে টমেটো শসা বীট গাজর মুলা ইত্যাদি। যেকোনো দু' এক প্রকারের ফলমূল বা সবজি খেতে পারেন। অতিরিক্ত খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, বরং খিদে অনুসারে খেতে হবে। বিশ্রামে থাকতে হবে। দিনের বেলায় গায়ে রোদ লাগাতে পারলে খুব ভালো।
এছাড়া তুলসীপাতা যষ্টিমধু বা আদা ব্যবহার করলে মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যে আরোগ্য লাভ করা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে ৪-৫ দিন সময় লাগতে পারে।

তুলসীপাতা- তুলসী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ। এটি শ্বসনন্তন্ত্রের সমস্যা যেমন সর্দি কাশি এবং ব্রংকাইটিস নিরাময়ে সহায়ক। প্রত্যহ সকালে ১০টি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

যষ্টিমধু- যষ্টিমধু শ্বাসনালীকে সুস্থ রাখতে এবং কফ বের করতে সাহায্য করে, অর্থাৎ এটি কাশি ত্বরান্বিত করে। এবং গলার ব্যথা বা প্রদাহ দূর করতে কার্যকর। এক চামচ যষ্টিমধুর গুঁড়া ২০০- ৩০০ ml জলে ফুটিয়ে সেই জল হালকা উষ্ণ অবস্থায় পান করতে পারলে ভালো, সারাদিনে দুবার। অথবা ছোট টুকরা (২ গ্রাম) যষ্টিমধু ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

আদা- আদা গলার ব্যথা কমাতে বা শ্বাসনালীর দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শ্বাসযন্ত্রকে আরাম প্রদান করে। প্রায় ৩-৪ গ্রাম আদা প্রায় ২৫০ml জলে ফুটিয়ে সেই জন হালকা গরম অবস্থায় ধীরে ধীরে পান করতে হবে। এটি সারাদিনে ২-৩ করা যেতে পারে।

ওপারে যে তিনটি ভেষজের কথা উল্লেখ করা হলো তার মধ্যে যেকোনো দুটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

যদি দীর্ঘদিনের এলার্জি, হাঁপানি বা শ্বাসযন্ত্রের অন্য কোনো রোগের কারণে কাশির উপসর্গ থাকে তবে তার চিকিৎসা ও পথ্যাদি তালিকা ভিন্নধর্মী হবে। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে পরবর্তী প্রতিবেদনে।

কাশি নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই প্রাথমিক উপায় অবলম্বন করার সাথে সাথে আপনার উচিত একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বা কবিরাজের পরামর্শ নেওয়া।

Medical disclaimer-
এই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। আতএব কোনো রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
                  ~ রাম রানা

মন্তব্যসমূহ